আল কুরআন : আল- আম্বিয়া : ৪৪ থেকে ৬৪
বরং আমরাই তাদের এবং তাদের পূর্ব পুরুষদের ভোগবিলাসের উপকরণ দিয়েছি, তাছাড়া তাদের বয়সকালও হয়েছিল দীর্ঘ। তারা কি দেখেনা, আমরা তাদের দেশকে চারদিক থেকে সংকু...
বিস্তারিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন
আবু আইয়ুব রা. বলেন, আমি যখনি তোমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পিছনে নামায পড়েছি, তাকে নামায শেষ করে এই দোয়া পড়তে শুনেছি। (যার অর্থ:) হে...
বিস্তারিতআমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা
প্রাণের বাংলাদেশ স্বাধীন হলো। প্রিয় বাংলাদেশ স্বাধীন হলো। এই স্বাধীনতা আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তি সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা ৭১ সা...
বিস্তারিতমুসলিম উম্মাহর বিপর্যয় ও তার প্রতিকার
মুফতী আমজাদুল হক খান আরমানী
মুসলিম উম্মাহর বিপর্যয়েরকারণ
বর্তমান মুসলিম উম্মাহর এরূপ পরিণতির সম্মূখীন হওয়ার মৌলিক
পাঁচটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে।
(১) আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে আরোপিত বিধান পারস্পরিক ঐক্য সংহতির কথা
ভুলে গিয়ে সতধা বিচ্ছিন্ন হওয়া।
(২) আল্লাহ তা’আলার অলৌকিকত্বের উপর নির্ভরশীল হওয়া।
(৩) নিজেদেরকে
নিষ্ক্রয় রেখে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করার প্রবণতা।
(৪) ইসলামি শিক্ষা না
থাকা।
(৫) জিহাদে অনিহা
প্রদর্শন।
এবার আসুন আমরা ধারাবাহিকভাবে পাঁচটি জিনিষ সম্পর্কে কুরআন
সুন্নাহর আলোকে জানার চেষ্টা করি।
(১) বর্তমান মুসলিম উম্মাহর এরূপ পরিণতির সম্মূখীন হওয়ার মৌলিক প্রথম কারণ হচ্ছে আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে আরোপিত বিধান পারস্পরিক ঐক্য সংহতির কথা ভুলে গিয়ে সতধা বিচ্ছিন্ন হওয়া।
পারস্পরিক ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা
বর্তমানে মুসলিম জাতি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আরোপিত বিধান
পারস্পরিক ঐক্য সংহতির কথা ভুলে গিয়ে সতধা বিছিন্ন হয়ে পরেছে। মুসলমানদের ঐক্য
বিমুখতার কারণে অমুসলমান অপশক্তি মুসলিম উম্মাহকে বিশ্ব হতে উৎখাত করতে সম্মিলিত
ভাবে প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত ইসলাম ও মুসলমানদের বিরোধীতায় সমগ্র কুফরি
শক্তি এক ও অভিন্ন। তাদের মাঝে ছোট খাট মতভেদ থাকলেও ইসলাম ও মুসলমানদের বিরোধিতায়
তাদের মাঝে কোন দ্বিমত নেই। কিন্তু পারছিনা কেবল আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে। পারছিনা
বিছিন্নতার বেড়াজাল ছিন্ন করে ঐক্যের অটুট বন্ধনে আবদ্ধ হতে। ইসলাম বিরোধিরা যে
বিষয়টা উপলব্ধি করতে সক্ষম হল আমরা তাতে হলাম চরম ভাবে ব্যর্থ অথচ আল্লাহর তা’আলা দ্বীর্থহীন ভাষায় মুসলমানদের ঐক্য গড়ে তোলার জন্য তাগিদ
দিয়ে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন: এবং আল্লাহ তায়ালার রুজ্জুকে একত্রিত হয়ে আকড়ে ধর
আর দলাদলি করোনা এবং আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে যে নিয়ামত দান করেছেন তা স্মরণ কর।
যখন তোমরা একে অন্যের দুশমন ছিলে অতপর আল্লাহ পাক তোমাদের অন্তরে স¤প্রীতির ভাব সৃষ্টি
করেছেন। অতএব, তোমরা তারই নিয়ামতে পরস্পর
ভাই ভাই হয়ে গেলে এবং তোমরা দলাদলির শোচণীয় পরিণাম স্বরূপ দোজখের নিকটবর্তী হয়ে
গিয়েছিলে। আল্লাহ পাক তোমাদেরকে তাহতে রক্ষা করেছেন। এ ভাবে আল্লাহ পাক তার
নিদর্শন সমূহ তোমাদের নিকট সুস্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করেন। হয়ত তোমরা সৎ পথ প্রাপ্ত
হও। (আল ইমরান-১০৩)
আলোচ্য আয়াতে কারীমার মর্মবাণী হচ্ছে মহান আল্লাহ তা’আলা মানুষকে পবিত্র কুরআন তথা তার বিধানকে সুদৃঢ় ভাবে আকড়ে
ধরে তা বাস্তবায়ন করার নির্দেশ দিয়েছেন।
অতপর, নিজেদের মধ্যে
পারস্পরিক দ্ব›দ্ব মতভেদ ভুলে গিয়ে
একে অন্যের দোষ ত্র“টি অম্বেষণ না করে
অপরের কুৎসা বা কাউকে ঠাট্টা বিদ্রুপ না করে ইত্যাদি গহিত কাজ থেকে বিরত থেকে
পরস্পরের মধ্যে ঐক্য ও স¤প্রীতি স্থাপন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আয়াতের শেষাংশে
পারস্পরিক ঐক্য স্থাপন যে আল্লাহ প্রদত্ত এক বিশেষ নিয়ামত, সে নিয়ামতের স্মরণ
করা হয়েছে। বর্বরতার যুগে আওস এবং খাজরাজ দু’গোত্রের মধ্যে যুদ্ধ
লেগেই থাকত। তাদের অব্যাহত শত্র“তা উভয় গোত্রের
জীবনকে দুর্বিসহ করেছিল। ইসলাম কবুল করার কারণে তাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ভাব সৃষ্টি
হয়। তারা নিতান্ত ভাই ভাই হয়ে জীবন যাপন করে। এটি ছিল আল্লাহ পাকের বিশেষ নিয়ামত।
পরস্পরের যুদ্ধ বিগ্রহের কারণে তারা যেন দোজখের এক প্রান্তে পৌঁছে গেছে। কিন্তু
আল্লাহ পাক ইসলামের নিয়ামত তাদেরকে দান করেছেন, ফলে দোজখের শাস্তি থেকে তারা নাজাত
পাবে।
অতএব, সর্ব প্রথম নিয়ামত
হলো ইসলাম আর দ্বিতীয় নিয়ামত হলো পরস্পরের স¤প্রীতি আর তৃতীয় নিয়ামত হলো ইসলাম এবং পরস্পরের স¤প্রীতির বরকতে দোজখের
কঠিন শাস্তি থেকে নাজাত লাভ। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় আমরা পরস্পরের মধ্যে স¤প্রীতির পরিবর্তে একে
অন্যের কুৎসা বা কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে ঠাট্টা বিদ্রুপ করতে নিজেদের মহা ব্যস্ত
রেখেছি। অথচ পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন:মুমিনগণ, কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর
নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী
অপেক্ষা শ্রেন্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে
মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ। যারা
এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালেম। (হুজরাত-১১)
দু’ দলে শত্র“তা লেগে তখন বিপক্ষের গুণগুলি তাদের চোঁখে ভাসেনা, শুধু তাদের দোষগুলি চোঁখে ভাসে, দোষ বলাবলি শুরু হয়ে যায়। এমনকি এক দল অন্য দলকে খারাপ লকব
দেয়া, খারাপ নাম রাখা শুরু করে দেয়, শেষ পর্যন্ত আপোষ মীমাংসার দ্বার রুদ্ধ হয়ে যায় বিধায়
আল্লাহ তায়ালা পরস্পরে ঠাট্টা করতে নিষেধ করেছেন। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে:মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ।
এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে।
তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুত: তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই
আল্লাহ্ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। (হুযুরাত-১২)
কিন্তু মুসলমানরা কি আজ ঐক্যবদ্ধ? না পস্পরের কাদা ছোরা ছুরিতে লিপ্ত। মুসলমানরা কি বহুদা
বিভক্ত নয়? আপন আপন স্বার্থ, ক্ষমতা রক্ষার জন্য বিভিন্ন ফিরকাহ, মাযহাব, পীরানা ঘরানা ইত্যাদি
দলে বিভক্ত হয়ে একে অন্যকে কাফের মুরতাদ,
ফাছেক, জাহেল মোনাফিক বাতিল বিদ’আতি ইত্যাদি বলে অভিহিত করে পরম তৃপ্তি লাভে মহাব্যস্ত নয়? এক শ্রেণীর মুসলমানরা অন্যের দোষ-ত্র“টি অন্বেষণ, অপরকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ
করতে কুৎসা রটনায় পরস্পরের ঐক্যের মাঝে প্রাচীর গড়তে মহাব্যস্ত।
যারা নিজেদেরকে কুরআন সুন্নাহ, ফিকহ, এর বড় বড় পণ্ডিত
নায়েবে রাসূল কিংবা ইসলামের ধারক বলে দাবীদার, তাদের একটুু চিন্তা করা দরকার যে এই মুহুর্তে ইসলাম ও মুসলমানদের প্রধান শত্র“ কে? সাম্রাজ্যবাদী, ইহুদিবাদী, হিন্দুত্ববাদী? নাকি অন্য কোন মাযহাব ফিরকাহ পীরানা, ঘরানার মুসলমানরা?
যদি
সাম্রাজ্যবাদী ইহুদীবাদীরাই ইসলাম ও
মুসলমানদের মূল শত্র“ হয়ে থাকে, তাহলে নিজেদের মধ্যকার মাযহাব, ফিকহর দ্ব›দ্ব আপাতত স্থগিত
রেখে প্রধান শত্র“র বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে রাজি আছেন ? যদি রাজি না থাকেন তবে কেন নেই?
তারা কি উপলব্ধি করেনা? যে, বাংলাদেশে সাম্রাজ্যবাদী, ইহুদীবাদী ও হিন্দুত্ববাদীদের যে সব এজেন্ট ও ইসলাম
দ্রোহীরা রয়েছে তাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, আগ্রাসন থেকে ইসলাম ও মুসলমানদের বাঁচাতে হলে ইসলাম
পন্থিদের অবশ্যই রাষ্ট্রক্ষমতার একান্ত প্রয়োজন এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অর্জনের
পূর্ব শর্ত হলো নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক কাঁদা ছোড়াছুড়ি ছেড়ে দিয়ে বড় দল মাযহাব, ফিকাহ, পীরানা, ঘরানা নির্বিশেষে সকল মুসলমানদের নিবিড় ঐক্য ও সংহতি।
মুসলমানরা যত দিনই সমাজ সভ্যতার পুরো ভাগে ছিল, ততোদিন মুসলমানরা এক দিকে ঈমান আকিদা ও তৌহীদ এর ওপর ছিলো
মজবুত এবং অন্যদিকে সামরিক শক্তিতে ছিল অজেয়। বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও দর্শন চর্চায়
ছিল সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সমকালিন বিশ্বের তুলনায় ছিল সভ্য ও অগ্রগামি। কিন্তু
মুসলমানরা যখন সামরিক, শৌর্য, ঐক্য, জ্ঞান, বিজ্ঞান, দর্শন সাহিত্য চর্চা
ইত্যাদি ছেড়ে দিয়ে আয়েশী জীবনের অনুরক্ত হয়ে পড়ল একপেশেভাবে নিজেদেরকে খানকা হুজুর, মসজিদ, মাজার ইত্যাদির আওতায়
নিজেদের সীমাবদ্ধ করে ফেললো।
মাযহাব, ফিরকাহ, পীরানা ঘরানার দ্ব›দ্ব ও পরস্পরের
বিরুদ্ধে বিবৃতি ফতোয়াকেই ইসলামের মুখ্য কাজ বলে কার্যত ব্যস্ত করে বসলো এবং ইহুদী, খৃৃষ্টান, মূর্তী পুজক, নাস্তিক ও মুরতাদদের বিরুদ্ধে জিহাদের পরিবর্তে মাযহাব, ফিরকাহ ইত্যাদি মতাবলম্বি মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়াইকেই
প্রথম ও পরম কর্তব্য বলে সাব্যস্ত করলো। তখন থেকেই বিশ্ব সমাজ ও সভ্যতার নেতৃত্ব
থেকে শুরু হল মুসলমানদের পতন বা অবরোহন।
তখন থেকেই দুনিয়ার সমাজ সভ্যতার নেতৃত্ব চলে যেতে লাগলো
ইহুদি খৃষ্টান ও মূর্তি পূজক আর ইসলামদ্রোহীদের হাতে। হীনবল ও তাৎপর্যহীন হয়ে আজ
মুসলমানদের করতে হচ্ছে সেই ইহুদী নাছারাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ পায়রোবি। জাতীয়
ঐক্য প্রতিষ্ঠার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে সাথে সাথে বিভেদ সৃষ্টি করা থেকে
নিষেধ করে অপর এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন: আর আল্লাহ পাক ও তার রাসূলের
হুকুম মেনে চল এবং আত্মকলহে লিপ্ত হবেনা। নতুবা তোমরা সাহস হারা হয়ে পড়বে এবং
তোমাদের শক্তি বিলুপ্ত হবে। আর তোমরা সবর অবলম্বন কর। নিশ্চয়ই আল্লাহপাক সবর
অবলম্বন কারীদের সাথে রয়েছেন। (আনফাল:৪৬)
আল্লাহ পাক ও তার রাসূলের হুকুম মেনে চলা, আনুগত্য প্রকাশ করা। এ আনুগত্য প্রকাশ করার বরকতেই বিজয়ের
গৌরব অর্জন করা যাবে। আল্লাহ পাক ও তার রাসূলের বিধি নিষেধ যথা সময়ে পালনের মধ্যেই
রয়েছে মুসলমান জাতির সাফল্য। আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করার পাশা পাশি জাতীয় ঐক্য
এবং সংহতি রক্ষা করার উপর আল্লাহ তায়ালা প্রভূত গুরুত্ব আরোপ করেছেন। কোন
অবস্থাতেই পরস্পর কলহ দ্ব›েদ্ব লিপ্ত না হওয়া।
পরস্পরের মাধ্যমে যদি কলহ দ্ব›দ্ব হয়। তবে তার
পরিণাম হয় অত্যন্ত ভয়াবহ। আত্মকলহে লিপ্ত কোন জাতি শুধু যে পৃথিবীতে উন্নতি করতে
পারে না তা নয়। বরং আত্মরক্ষা ও করতে পারেনা। তাই আলোচ্য আয়াতে সুস্পষ্ট ভাষায়
নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে; তোমরা পরস্পর কলহে লিপ্ত হয়ো না। যদি পরস্পর কলহ
দ্বন্ধে লিপ্ত হও তবে দু’টি বিপদে নিপতিত হবে।
(১) তোমরা সাহস হারা হয়ে পরবে। পরস্পরের কলহ দ্ব›েদ্বর কারণে মুসলমানদের শক্তি
খর্ব হবে, একতার বল বিদায় নিবে, আর তার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি স্বরুপ তোমরা সাহস হারা হয়ে
পরবে।
(২) অন্তদ্ব›েদ্বর কারণে দুশমনদের উপর যে
দাপট ছিল তা থাকবে না, দুশমনের দূ:সাহস বেড়ে
যাবে। এবং বিজয় লাভের আশা সুদূর পরাহত হবে।
পরস্পরের রেশারেশি, কলহ দ্ব›দ্ব জাতীয় জীবনে বিপদ ডেকে
আনে। তাই এ সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে।
আলোচ্য আয়াত দ্বারা প্রতিয়মান হয় যে আল্লাহ পাকের সাহায্য
লাভের জন্য ফলশ্র“তি হলো নিশ্চিত বিজয়।
অতএব, মুসলমানদের বিজয় লাভের জন্য
শুধু জনবল এবং অস্ত্রবলই যথেষ্ট নয়। বরং এর জন্য চাই আল্লাহ পাক ও তার রাসূলের
একান্ত অনুগত হওয়া। আত্মকলহ পরিহার করা এবং ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধৈর্য ও সহনশীলতার পরিচয়
দেয়া। দুশমনের মোকাবেলায় অটল অবিচল থেকে নিজ নিজ কর্তব্য সম্পাদন করা এবং অধিক
পরিমাণে আল্লাহকে স্মরণ করা। মূলত; পবিত্র কুরআনে বর্ণিত
এ গুনাবলী অর্জনের মাধ্যমেই মুসলিম জাতি
বিজয় লাভে সক্ষম হয়। ইসলাম ও মুসলমানদের বিজয় লাভের জন্য যেখানে পূর্ব শর্ত করা
হয়েছে ব্যক্তিগত, সামাজিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইত্যাদি ক্ষেত্রে একে অন্যের বিপদে
আপদে সাহায্য সহযোগিতা করবে। সুখে দু:খে সহানুভূতি ও সহমর্মিতা প্রকাশ করবে, বিশ্বের সকল মুসলমান ঐক্যবদ্ধ হয়ে, শ্লোগান দিয়ে সামাজিক,
অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসবে।
আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক। তারা ভাল
কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ থেকে বিরত রাখে। নামায প্রতিন্ঠা করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন
যাপন করে। এদেরই উপর আল্লাহ্ তা'আলা দয়া করবেন।
নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পরাক্রমশালী, সুকৌশলী। (তাওবাহ:৭১)
আর সমস্ত মুমিনের অভিযানে বের হওয়া সঙ্গত নয়। তাই তাদের প্রত্যেক দলের একটি অংশ কেন বের হলো না, যাতে দ্বীনের জ্ঞান লাভ করে এবং সংবাদ দান করে ¯¦জাতিকে, যখন তারা তাদের কাছে প্রত্যাবর্তন করবে, যেন তারা বাঁচতে পারে। (তাওবাহ-১২২ )
বিধর্মীদের সাথে বন্ধুত্ব করার পরিণাম
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে মুসলিম দেশগুলো প্রতিবেশী মুসলিম
দেশসমূহের উপর ইহুদি নাছারা কর্তৃক চরম ভাবে আক্রান্ত হওয়ার পরেও তাদের যথেষ্ঠ
অর্থ সম্পদ শক্তি সামর্থ থাকার পরেও ইসলাম ও মুসলমানদের দুশমনদের কোন প্রকার
প্রতিবাদ বা প্রতিহত না করে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। শুধু নিরব ভূমিকা পালন
করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং তারা ইহুদি খৃষ্টানদের পরম বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে আজ যখন
ইহুদীরা মুসলমানদের প্রধান কিবলা আল-আকসা মসজিদ দখল করে কলুষিত করেছে। ভারতের
হিন্দুত্ববাদীরা কাশ্মীরের হযরত বাল মসজিদে হামলা চালিয়ে মুসলমানদের শহীদ করেছে।
ব্রাহ্মন্যবাদী কট্টর হিন্দুরা মুসলমানদের ইবাদতের পবিত্রতম স্থান বাবরী মসজিদ
ধ্বংস করেছে। ইঙ্গ-মার্কিনী হানাদাররা আফগানিস্তান এর মত তালেবান সরকার দ্বারা
গঠিত একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী সরকার ও রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে সেখানে তাদের অনুগত
তাবেদার সরকার নিযুক্ত করে ইহুদীবাদ চালু করার প্রয়াসে লিপ্ত রয়েছে।
মুসলমান ও মুসলিম দেশ সমূহের উপর নেমে এসেছে অত্যাচারের
বিশাল পাহাড়সম নির্যাতন। মানুষরূপি দু’পায়ের হায়েনা কর্তৃক
নির্যাতিত ও নিগৃহীত হচ্ছে বসনিয়াবাসী। পদে পদে লাঞ্ছিত হচ্ছে মুক্তিকামি স্বাধীন
চেচনিয়ার অধিবাসীগণ। অত্যাচার ও নিপীড়নে রক্তাক্ত আলজেরিয়ার মুসলমানেরা ঘরহারা, স্বজনহারা, ক্ষুদার্ত, তুষ্ণার্ত, ধর্ষিতা বোনের
হাহাকার। নিপীড়িত শিশুর আহাজারি শোনা যায় বার্মার শান্তি প্রিয় মুসলমানদের কন্ঠে।
সর্বশেষ মার্কিন হায়েনার দল ইরাক আক্রমণ করে। যে মাটিতে
শুয়ে আছেন, হযরত আদম আলাইহিস সালাম, হযরত নূহ আলাইহিস সালাম, হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম, হযরত ইব্রাহিম
আলাইহিস সালাম, হযরত আলী রাযি আল্লাহু আনহু, হযরত হুসাইন রাযি আল্লাহু আনহু, হযরত আবু হানিফা রাহমাতুলাহি আলাইহি, হযরত আব্দুল কাদের জিলানী রাহমাতুলাহি আলাইহি সহ অসংখ্য
নবী ও গাউস কুতুব সহ মহা মনীষিবৃন্দ।
হায়েনার দল সেখানে যে সীমাহীন জুলুম, নির্যাতন চালিয়েছে তা বলতে গেলে কলজে ফেঁটে যাবার উপক্রম
হয়। হৃদয় ঢুুঁকরে উঠে, বুকে অশ্র“র বন্যা বয়ে যায়। অথচ মুসলমানদের এই কঠিন সন্ধিক্ষণে
প্রতিবেশী বিত্তশালী মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর কি ভূমিকা ছিল তা আলোচ্য নিবন্ধে একান্ত
দাবীদার।
সৌদী আরব, কুয়েত, কাতার, আরব আমীরাত প্রভূতি
তেল ও খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধশালী বিত্তবান মুসলিম দেশের শাসক ও এলিট শ্রেণী তাদের
প্রায় সমস্ত অর্থ সম্পদই মুসলমানদের ও ইসলামের কল্যাণে বা কুরআন স্ন্নুাহ
প্রদর্শিত পথে ব্যয় বা কাজে না লাগিয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের দুশমন ইহুদী খৃষ্টানদের
ব্যাংকে জমা করে তাদের সাথে পরম বন্ধুত্ব ও সখ্যতা গড়ে তুলেছে। আমীর উমারাগণ ইহুদী
নাছারাদের স্ব-স্ব দেশের মাটিতে মুসলিম দেশগুলোর উপর সামরিক আগ্রাসন চালানোর
সুবিদার্থে তাদেরকে সামরিক ঘাঁটি করতে সাহায্য
করছে।
মিশর, পাকিস্তান, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশের শাসক এলিটরাও সিংহ
ভাগই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সাম্রাজ্যবাদী,
ইহুদীবাদী, ব্রাহ্মন্যবাদীদেরই তল্পি বাহক হিসাবে গড়ে তুলতে পেরে
নিজেদেরকে ধন্য মনে করছে। আর যে সব ব্যক্তি নিজেদের ইসলামী পন্ডিত বা ইসলামের
ঘাঁটি অনুসারি দাবী করেন তাদের অনেকেই মধ্য প্রাচ্যের সে সব শাসক ও ধনী গোষ্ঠির
সঙ্গে আর্থিক ও জাগতিক লাভের সম্পর্ক বজায় রাখেন।
মোট
কথা যে সব মুসলিম রাষ্ট্রের মুসলিম নাম ধারি শাসক ও ধনী গোষ্ঠী ইহুদী নাছারাদের
ব্যাংকে সম্পদ জমা রাখেন। মুসলিম দেশের মুসলিম ভাইদের হত্যার উদ্দেশ্যে কাফেরদেরকে
সামরিক ঘাঁটি গড়তে সাহায্য করেন। তাদের তাবেদারী করেন এবং খুব জাঁকজমক পূর্ণ এমন
বিলাসী জীবন যাপন করেন যা আদৌ ইসলাম সম্মত নয়। যে সব মুসলিম নামধারী তোষামোদি
তল্পিবাহক আয়েশী জীবন যাপন নিজেদের জাতিকে স্বার্থ হাছিলের উদ্দেশ্যে ইহুদী, খৃষ্টান, সাম্রাজ্যবাদী, ব্রাহ্মন্যবাদী নাস্তিক
কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব করে ঐ সব আরাম প্রিয়দেরকে হুশিয়ারী উচ্চারণ করে আল্লাহ
তায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেন: হে মু’মিনগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ
করোনা। তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যে যে কেউ তাদেরকে বন্ধু বানাবে
সে নিশ্চয়ই তাদেরই একজন হবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা অত্যাচারী স¤প্রদায়কে হিদায়ত করেন না।
নিয়ত পরিশুদ্ধ রাখা কেন অনিবার্য ভাবে প্রয়োজন? ‘সাইয়িদুনা উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘সমস্ত কাজ নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। ব্যক্তি তাই পাবে, যা সে নিয়ত করবে। অতএব, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সন্তুষ্টির) জন্য হিজরত করেছে, তার হিজরত (বাস্তবিকই) আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য হয়েছে। আর যে ব্যক্তির হিজরতের (উদ্দেশ্য) ছিল, দুনিয়া উপার্জন বা কোনো নারীকে বিয়ে করা তার হিজরত সে উদ্দেশ্যেই গণ্য হবে।’ (সে আখিরাতে কোনো সাওয়াব পাবে না।) (সূরা মুমিনুন: ১১৫)
লা মাযহাবির পক্ষ থেকে আর একটা প্রশ্ন করা হয়, ইমামগণ সাধারণ মানুষ; তারা তো নবী না। আর সবাই একমত যে নবী ছাড়া প্রতিটি মানুষ যত বড়ই ইমাম হোক সবাই সঠিক করতে পারে আবার ভুল করতে পারে। তাই আমি এমন একজন মানুষকে কিভাবে মানবো যে সঠিক করতে পারে আবার ভুল করতে পারে। ইমামকে মানা ওয়াজিব করে দেওয়া মানে একটা ভুল কাজ
যাবতীয় কল্যাণ, সর্বপ্রকার জ্ঞান-গরিমা, প্রজ্ঞা ও রহস্যের আধার হল আল কুরআন। একে অনুসরণ করেই দুনিয়া ও আখিরাতে পাওয়া যায় সুখের সন্ধান, মেলে সঠিক পথের দিশা। আল কুরআন মহান আল্লাহর বাণীর অপূর্ব সমাহার বিস্ময়কর এক গ্রন্থের নাম। আল কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ সংরক্ষিত এক সংবিধান। আল্লাহ তা‘আলা জিবরাঈল আলাইহিস সালামের মাধ্যমে সুদীর্ঘ ২৩ বছরে মানব জাতির হিদায়াত হিসেবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন তার নাম আল কুরআন। এই কুরআন যেমন সমগ্র মানব জাতির মানসিক সংশয়, সন্দেহ, অস্পষ্টতা, কুপ্রবৃত্তি, লোভ-লালসা নামক নানা রকম রোগ-ব্যাধি নিরাময়ের অব্যর্থ মহৌষধ ঠিক তেমনি দৈহিক রোগ-ব্যাধি, বেদনা, কষ্ট-ক্লেশ এবং জীবন চলার পথের সকল অন্ধকার বিদূরিত করার এক অনবদ্য নির্দেশিকা। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, ‘আমি কুরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের প্রতিষেধক এবং মুমিনদের জন্য রহমত।’ (বনী ইসরাঈল : ৮২) এই কুরআন হল, সত্য-মিথ্যা এবং বৈধ-অবৈধের সীমা-রেখা
যাবতীয় প্রশংসা কেবলই আল্লাহ তা‘আলার যিনি সমগ্র জগতের মালিক ও রব। আর সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালামের ওপর, যিনি সমস্ত নবীগণের সরদার ও সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী। আরও বর্ষিত হোক তার পরিবার-পরিজন ও সমগ্র সাথী-সঙ্গীদের ওপর। মনে রাখতে হবে, অহংকার ও বড়াই মানবাত্মার জন্য খুবই ক্ষতিকর ও মারাত্মক ব্যাধি, যা একজন মানুষের নৈতিক চরিত্রকে শুধু কলুষিতই করে না বরং তা একজন মানুষকে হেদায়াত ও সত্যের পথ থেকে দূরে সরিয়ে ভ্রষ্টতা ও গোমরাহির পথের দিকে নিয়ে যায়। যখন কোনো মানুষের অন্তরে অহংকার ও বড়াইর অনুপ্রবেশ ঘটে, তখন তা তার জ্ঞান, বুদ্ধি ও ইরাদার ওপর প্রাধান্য বিস্তার করে এবং তাকে নানাবিধ প্রলোভন ও প্ররোচনার মাধ্যমে খুব শক্ত হস্তে টেনে নিয়ে যায় ও বাধ্য করে সত্যকে অস্বীকার ও বাস্তবতাকে প্রত্যাখ্যান করতে। আর একজন অহংকারী সবসময় চেষ্টা করে হকের