অনুসরন করুন :
আল-কুরআন

আল— হজ্ব : ৩০ থেকে ৩৯

আল কুরআন (আল— হজ্ব : ৩০ থেকে ৩৯) ৩০. এগুলো (হজ্বের বিধান)। এ ছাড়া যে, আল্লাহ এবং পবিত্র (স্থান ও অনুষ্ঠান) সমূহের প্রতি সম্মান দেখাবে, তার প্রভ...

বিস্তারিত
আল-হাদীস

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন

সাঈদ ইবনু আবদুর রহমান মাখযূমী রা. আব্বাদ ইবনু তামীম তৎপিতৃব্য আবদুল্লাহ্ ইবনু যায়দ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয...

বিস্তারিত
সম্পাদকীয়

বাংলাদেশের ইতিহাসে আরেকটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলো

নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস এর নেতৃত্বে বাংলাদেশের ইতিহাসে আরেকটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলো। নিঃসন্দেহে এই সরকার একটি বিপ্লবোত্তর সরক...

বিস্তারিত

অহংকার ও আত্মতৃপ্তি

মূল: মুহাম্মাদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ

অনুবাদ: যাকের উল­াহ আবুল খায়ের

(২৪২, মার্চ-এপ্রিল ২০১৯ সংখ্যঅয় প্রকাশিত)

 

সকল প্রশংসা কেবলই আল্লাহ তাআলার যিনি সমগ্র জগতের মালিক ও রবআর সালাত ও সালাম বর্ষিত   হোক আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল­ামের ওপর, যিনি সমস্ত নবীগণের সরদার ও সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী। আরও বর্ষিত হোক তার পরিবার-পরিজন ও সমগ্র সাথী-সঙ্গীদের ওপর।

মনে রাখতে হবে, অহংকার ও বড়াই মানবাত্মার জন্য খুবই ক্ষতিকর ও মারাত্মক ব্যাধি, যা একজন মানুষের নৈতিক চরিত্রকে শুধু কলুষিতই করে না বরং তা একজন মানুষকে হেদায়াত ও সত্যের পথ থেকে দূরে সরিয়ে ভ্রষ্টতা ও গোমরাহির পথের দিকে নিয়ে যায়। যখন কোনো মানুষের অন্তরে অহংকার ও বড়াইর অনুপ্রবেশ ঘটে, তখন তা তার জ্ঞান, বুদ্ধি ও ইরাদার ওপর প্রাধান্য বিস্তার করে এবং তাকে নানাবিধ প্রলোভন ও প্ররোচনার মাধ্যমে খুব শক্ত হস্তে  টেনে নিয়ে যায় ও বাধ্য করে সত্যকে অস্বীকার ও বাস্তবতাকে প্রত্যাখ্যান করতে। আর একজন অহংকারী সবসময় চেষ্টা করে হকের নিদর্শনসমূহকে মিটিয়ে দিতে। অত:পর তার নিকট সজ্জিত ও সৌন্দর্য মণ্ডিত হয়ে ওঠে কিছু বাতিল, ভ্রান্ত, ভ্রষ্টতা ও গোমরাহি যার কোনো বাস্তবতা নেই। ফলে সে এ সবেরই অনুকরণ করতে থাকে এবং গোমরাহিতে নিপতিত থাকে। এসবের সাথে আরও যোগ হবে, মানুষ সে যত বড়ই হোক না কেন, তাকে সে নিকৃষ্ট মনে করবে, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে তাকে অপমান করবে।

এ নিবন্ধে অহংকার কাকে বলে তা বর্ণনা করা হয়েছে এবং অহংকার ও বড়াইর মধ্যে পার্থক্য কি তা আলোচনা করা হয়েছে। এ ছাড়াও এ নিবন্ধে থাকছে অহংকারের ক্ষতি, নিদর্শন, কারণ ও মানব জীবনে তার প্র্রভাব কি তার একটি সার-সংক্ষেপ। সবশেষে অহংকারের চিকিৎসা কি তা আলোচনা করে এর সমাপ্তি টানা হয়েছে।

আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা করি, আল্লাহ তাআলা আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের স্থায়ী ও চিরন্তন কল্যাণ দান করুন। আমাদের ক্ষমা করুন। আমীন।

মুহাম্মাদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ?


অহংকার বা কিবিরের সংজ্ঞা:

কিবিরের আভিধানিক অর্থ: আল্লামা ইবনু ফারেস রাহ. বলেন, কিবির অর্থ: বড়ত্ব, বড়াই, অহংকার ইত্যাদি। প্রবাদে আছে:

ইজ্জত সম্মানের দিক দিয়ে যিনি বড়, তিনি তার মত সম্মানীদের থেকে সম্মানের উত্তরসূরি বা উত্তরাধিকারী হন।

আর আল্লামা ইবনু মানযূর উলে­খ করেন, শব্দটিতে কাফটি যের বিশিষ্ট। এর অর্থ হলো, বড়ত্ব, অহংকার ও দাম্ভিক।

আবার কেউ কেউ বলেন, তাকাব্বারা শব্দটি কিবির থেকে নির্গত। আর  শব্দটি দ্বারা বার্ধক্য বুঝায়। আর তাকাব্বুর ও ইস্তেকবার শব্দটির অর্থ হলো, বড়ত্ব, দাম্ভিক ও অহমিকা।

ইসলামী পরিভাষায় কিবিরের সংজ্ঞা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই স্বীয় হাদীসে কিবিরের সংজ্ঞা বর্ণনা করেন।

আব্দুল­াহ ইবনু মাসউদ রাদিয়াল­াহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

যার অন্তরে একটি অণু পরিমাণ অহংকার থাকে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা বললে, এক লোক দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল, কোনো কোনো লোক এমন আছে, সে সুন্দর কাপড় পরিধান করতে পছন্দ করে, সুন্দর জুতা পরিধান করতে পছন্দ করে, এসবকে কি অহংকার বলা হবে? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তাআলা নিজেই সুন্দর, তিনি সুন্দরকে পছন্দ করেন। (সুন্দর কাপড় পরিধান করা অহংকার নয়) অহংকার হলো, সত্যকে গোপন করা এবং মানুষকে নিকৃষ্ট বলে জানা।

এ হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটি অংশে অহংকারের সংজ্ঞা তুলে ধরেন।

এক:

হককে অস্বীকার করা, হককে কবুল না করে তার প্রতি অবজ্ঞা করা এবং হক কবুল করা হতে বিরত থাকা। বর্তমান সমাজে আমরা অধিকাংশ মানুষকে দেখতে পাই, যখন তাদের নিকট এমন কোনো লোক হকের দাওয়াত নিয়ে আসে, যে বয়স বা সম্মানের দিক দিয়ে তার থেকে ছোট, তখন সে তার কথার প্রতি কোনো প্রকার গুরুত্ব দেয় না। আর তা যদি তাদের মতামত অথবা তারা যা নির্ধারণ ও যার ওপর তারা আমল করছে, তার পরিপন্থী হয়, তখন তারা তা অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করে। আর অধিকাংশ মানুষের স্বভাব হলো, যে লোকটি তাদের নিকট দাওয়াত নিয়ে আসবে, তাকে ছোট মনে করবে এবং তার বিরোধিতায় অটল ও অবিচল থাকবে, যদিও কল্যাণ নিহিত থাকে সত্য ও হকের আনুগত্যের মধ্যে এবং তারা যে অন্যায়ের অপর অটুট রয়েছে, তাতে তাদের ক্ষতি ছাড়া কোনোই কল্যাণ না থাকে। আমাদের সমাজে  এ ধরনের লোকের অভাব নেই। বিশেষ করে ছোট পরিসরে এ ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটতে থাকে। যেমন, পরিবার, স্কুল-মাদ্রাসায়, অফিস আদালত ও বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে এ ধরনের ঘটনা নিত্যদিন ঘটে থাকে।

অহংকারীরা যে বিষয়টির আশংকা করে অপর থেকে সত্যকে গ্রহণ করে না, তা হলো, সে যদি অপর ব্যক্তি থেকে প্রমাণীত সত্যকে গ্রহণ করে, তাকে মানুষ সম্মান দেবে না, মানুষ অপর লোকটিকে সম্মান দেবে। তখন সম্মান অপরের হাতে চলে যাবে এবং সেই মানুষের সামনে বড় ও সম্মানী লোক হিসেবে বিবেচিত হবে, অহংকারীকে কেউ সম্মান করবে না। এ কারণেই সে কাউকে মেনে নিতে পারে না, সে মনে করে সত্যকে গ্রহণ করলে তার সম্মান নিয়ে টানাটানি হবে এবং মানুষ তার প্রতি আর আকৃষ্ট হবে না। মানুষ সে লোকটিকেই বড় মনে করবে এবং তাকেই মানবে। আর বাধ্য হয়ে অহংকারীকেও অপরের অনুসারী হতে হবে।

কিন্তু এ অহংকারী লোকটি যদি বুঝতে পারত, তার জন্য সত্যিকার ইজ্জত ও সম্মান হলো, হকের অনুসরণ ও আনুগত্য করার মধ্যে, বাতিলের মধ্যে ডুবে থাকাতে নয়, তা ছিল তার জন্য অধিক কল্যাণকর ও প্রশংসনীয়।

উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল­াহু আনহু আবু মুসা আশয়ারী রাদিয়াল­াহু আনহুর নিকট চিঠি লিখেন, তুমি গত কাল যে ফায়সালা দিয়েছিলে, তার মধ্যে তুমি চিন্তা ফিকির করে যখন সঠিক ও সত্য তার বিপরীতে পাও, তাহলে তা থেকে ফিরে আসাতে যেন তোমার নফস তোমাকে বাধা না দেয়। কারণ, সত্য চিরন্তন, সত্যের পথে ফিরে আসা বাতিলের মধ্যে সময় নষ্ট করার চেয়ে অনেক উত্তম।

আব্দুর রহমান ইবনু মাহদী রাহ. বলেন, একদা আমরা একটি জানাযায় উপস্থিত হলাম, তাতে কাজী উবাইদুল­াহ ইবনুল হাসান রাহ. হাযির হলো। আমি তাকে একটি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে, সে ভুল উত্তর দেয়, আমি তাকে বললাম, আল্লাহ আপনাকে সংশোধন করে দিক, এ মাসআলার সঠিক উত্তর এভাবে। তিনি কিছু সময় মাথা নিচু করে চুপ করে বসে থাকলেন, তারপর মাথা উঠিয়ে বললেন, আমি আমার কথা থেকে ফিরে আসলাম, আমি লজ্জিত। সত্য গ্রহণ করে লজ্জিত হওয়া আমার নিকট মিথ্যার মধ্যে থেকে মাথা হওয়ার চেয়ে অধিক উত্তম।

দুই: মানুষকে নিকৃষ্ট জানা।

এটা বলা হয়, নিকৃষ্ট মনে করা, ছোট মনে করা ও অবজ্ঞা করাকে।

সুতরাং মানুষ কে নিকৃষ্ট মনে করা, অবজ্ঞা করা, তুচ্ছ মনে করা ও মানুষকে ঘৃণা করা। মানুষের গুণের থেকে নিজের গুণকে বড় মনে করা। কারো কোনো কর্মকে স্বীকৃতি না দেওয়া, কোনো ভালো গুণকে মেনে নেওয়ার  মানসিকতা না থাকা।

মনে রাখতে হবে, যারা মানুষকে খারাপ জানে, তাদের কর্মের পরিণতি হলো, মানুষ তাদের খারাপ জানবে। এ ধরনের লোকেরা মানুষের সুনামকে ক্ষুন্ন এবং তাদের যোগ্যতাকে ম্লান করতে আপ্রাণ চেষ্টা করে। সে অন্যদের ওপর তার নিজের বড়ত্ব ও উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার লক্ষ্যে, মানুষকে হেয় প্রতিপন্ন ও  ছোট করে। মানুষের সম্মানহানি ঘটানোর উদ্দেশ্যে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে ও অপবাদ রটায়। অহংকারীরা কখনোই মানুষের চোখে ভালো হতে পারে না, মানুষ তাদের ভালো চোখে দেখে না। 


অহংকারী তার নিজের কর্ম ও গুণ দিয়ে কখনোই উচ্চ মর্যাদা বা সম্মান লাভ করতে সক্ষম নয়। তাই সে নিজে সম্মান লাভ করতে না পেরে নিজের মর্যাদা ঠিক রাখার জন্য অন্যদের কৃতিত্বকে নষ্ট করে এবং তাদের মান-মর্যাদাকে খাট করে দেখে?

কিবির (অহংকার) ও উজব (আত্মতৃপ্তি) দুটির মধ্যে পার্থক্য

আবু ওহাব আল-মারওয়ারজী রাহ. বলেন, আমি আব্দুল­াহ ইবনু মুবারককে জিজ্ঞাসা করলাম কিবির কি? উত্তরে তিনি বলেন, মানুষকে অবজ্ঞা করা।

তারপর আমি তাকে উজব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘উজব কী? উত্তরে তিনি বললেন, তুমি তোমাকে মনে করলে যে, তোমার নিকট এমন কিছু আছে, যা অন্যদের মধ্যে নেই। তিনি বলেন, নামাযিদের মধ্যে উজব বা আত্মতৃপ্তির চেয়ে খারাপ আর কোনো মারাত্মক ত্রটি আমি দেখতে পাই না।


কিবিরের কারণসমূহ

একজন অহংকারী মনে করে, সে তার সাথী সঙ্গীদের চেয়ে জাতিগত ও সত্তাগতভাবেই বড় এবং সে অন্যদের থেকে স্বতন্ত্র, তার সাথে কারো কোনো তুলনা হয় না। ফলে সে কাউকেই কোনো প্রকার তোয়াক্কা করে না, কাউকে মূল্যায়ন করতে চায় না এবং কারো আনুগত্য করার মানসিকতা তার মধ্যে থাকে না। যার কারণে সে সমাজে এমনভাবে চলা ফেরা করে মনে হয় তার মত এত বড় আর কেউ নেই।


অহংকারের কারণসমূহ 

এক. কারো প্রতি নমনীয় না হওয়া বা আনুগত্য না করার স্পৃহা: একজন অহংকারী কখনোই চায় না, সে কারো আনুগত্য করুক বা কারো কোনো কথা শুনুক। সে চিন্তা করে আমার কথা মানুষ শোনবে আমি কেন মানুষের কথা শোনবো। আমি মানুষকে উপদেশ দেবো আমাকে কেন মানুষ উপদেশ দেবে। এভাবেই তার দিন অতিবাহিত হয়। দিন যত যায়, অহংকারীর অহংকারের স্পৃহা আরও বাড়তে থাকে এবং তার অহংকারও দিন দিন বৃদ্ধি পায়ফলে সে দুনিয়াতে আর কাউকেই মানতে বা কারো আনুগত্য করতে রাজি হয় না। তার অহংকার করার স্পৃহাটি ধীরে ধীরে এমন এক পর্যায় পৌঁছে, শেষ পর্যন্ত যে আল্লাহর হাতে আসমান ও জমিনের কর্তৃত্ব, তার আনুগত্যও সে আর করতে চায় না। তার এ ধরনের স্পৃহার কারণে তার মধ্যে এ অনুভূতি জাগে যে, সে কারো মুখাপেক্ষী নয়, সে নিজেই সর্বেসর্বা, তার কারো প্রতি আনুগত্য করার প্রয়োজন নেই। অহংকারীর এ ধরনের দাম্ভিকতা থেকে সৃষ্টি হয়, হঠকারিতা ও কুফরী। আল্লাহ তাআলা বলেন,“কখনো নয়, নিশ্চয়ই মানুষ সীমালঙ্ঘন করে থাকে। কেননা সে নিজকে মনে করে স্বয়ংসম্পূর্ণ। নিশ্চয়ই তোমার রবের দিকেই প্রত্যাবর্তন। (আলাক:৬-৮)

আল্লামা বাগাবী রাহ. বলেন, মানুষ তখনই সীমালঙ্ঘন এবং তার প্রভুর বিরুদ্ধাচরণ করে, যখন সে দেখতে পায়, সে নিজেই স্বয়ংসম্পন্ন।  তার আর কারো প্রতি নত হওয়া বা কারো আনুগত্য করার কোনো প্রয়োজন নেই। 

দুই. অন্যদের ওপর প্রাধান্য বিস্তারের জন্য অপ্রতিরোধ্য অভিলাষ:

একজন অহংকারী, সে মনে করে, সমাজে তার প্রাধান্য বিস্তার, সবার নিকট প্রসিদ্ধি লাভ ও নেতৃত্ব দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। তাকে এ লক্ষ্যে সফল হতেই হবে। কিন্তু যদি সমাজ তার কর্তৃত্ব বা প্রাধান্য মেনে না নেয়, তখন সে চিন্তা করে, তাকে যে কোনো উপায়ে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছতে হবে। চাই তা বড়াই করে হোক অথবা সমাজে বিশৃঙ্ঘলা সৃষ্টি করে। তখন সে যা ইচ্ছা তাই করে এবং সমাজে হট্টগোল সৃষ্টি করে।


তিন. নিজের দোষকে আড়াল করা:

একজন অহংকারী তার স্বীয় কাজ কর্মে নিজের মধ্যে যে সব দুর্বলতা অনুভব করে, তা গোপন রাখতে আগ্রহী হয়। কারণ, তার আসল চরিত্র যদি মানুষ জেনে যায়, তাহলে তারা তাকে আর বড় মনে করবে না ও তাকে সম্মান দেবে না। যেহেতু একজন অহংকারী সব সময় মানুষের চোখে বড় হতে চায়, এ কারণে সে পছন্দ করে, তার মধ্যে যে সব দুর্বলতা আছে, তা যেন কারো নিকট প্রকাশ না পায় এবং কেউ যাতে জানতে না পারে। কিন্তু মূলত: সে তার অহংকার দ্বারা নিজেকে অপমানই করে, মানুষকে সে নিজেই তার গোপনীয় বিষয়ের দিকে পথ দেখায়। কারণ, সে যখন নিজেকে বড় করে দেখায়, তখন মানুষ তার বাস্তব অবস্থা জানার জন্য তার সম্পর্কে গবেষণা করতে আরম্ভ করে, তার কোথায় কি আছে, না আছে তা অনুসন্ধান করতে থাকে। তখন তার আসল চেহারা প্রকাশ পায়, আসল রূপ খুলে যায়, তার যাবতীয় দুর্বলতা প্রকাশ পায় এবং তার অবস্থান সম্পর্কে মানুষ বুঝতে পারে। ফলে মানুষ আর তাকে শ্রদ্ধা করে না, বড় করে দেখে না, তাকে নিকৃষ্ট মনে করে এবং ঘৃণা করে। 


একজন অহংকারী ইচ্ছা করলে তার দোষগুণ গুলো বিনয়, নম্রতা, মানুষের সাথে বন্ধুত্ব ও চুপ-চাপ থাকার মাধ্যমে গোপন রাখতে পারত, কিন্তু তা না করে  অহংকার করার কারণে তার সব গোমর ফাঁক হয়ে যায়। এ ছাড়াও  মানুষ যা পছন্দ করে না, তা নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করা, কোনো বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করা হতে দুরে থাকা এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য মিথ্যা দাবি করা হতে বিরত থাকার মাধ্যমে, সে তার যাবতীয় দুর্বলতা ও গোপন বিষয়গুলো দামা-চাপা দিতে পারত। কিন্তু তা না করে সে অহংকার করাতে তার অবস্থা আরও প্রতিকুলে গেল এবং ফলাফল তার বিপক্ষে চলে গেল। তার বিষয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে তার যাবতীয় অপকর্ম মানুষ জানতে পারল।

চার. অহংকারী যেভাবে অহংকারের সুযোগ পায়: 


কতক লোকের অধিক বিনয়ের কারণে অহংকারীরা অহংকারের সুযোগ পায়। অহংকারীরা যখনই কোনো সুযোগ পায়, তা তারা কাজে লাগাতে কার্পণ্য করে নাঅনেক সময় দেখা যায় কিছু লোক এমন আছে, যারা বিনয় করতে গিয়ে অধিক বাড়াবাড়ি করে, তারা নিজেদের খুব ছোট মনে করে, নিজেকে যে কোনো প্রকার দায়িত্ব আদায়ের অযোগ্য বিবেচনা করে এবং যে কোনো ধরনের আমানতদারিতা রক্ষা করতে সে অক্ষম বলে দাবি করে, তখন অহংকারী চিন্তা করে এরা সবাইতো নিজেদের অযোগ্য ও আমাকে যোগ্য মনে করছে, প্রকারান্তরে তারা সবাই আমার মর্যাদাকে স্বীকার করছে, তাহলে আমিই এসব কাজের জন্য একমাত্র যোগ্য ও উপযুক্ত ব্যক্তি। সুতরাং আমিতো তাদের সবার ওপর নেতা। শয়তান তাকে এভাবে প্রলোভন দিতে ও ফুঁসলাতে থাকে, আর লোকটি নিজে নিজে ফুলতে থাকে। ফলে এখন সে অহংকার বশত: আর কাউকে পাত্তা দেয় না সবাইকে নিকৃষ্ট মনে করে। আর নিজেকে যোগ্য মনে করে। 

0 | দেখেছেন : 553 |

সম্পর্কিত খবর

পরিশুদ্ধ নিয়ত

নিয়ত পরিশুদ্ধ রাখা কেন অনিবার্য ভাবে প্রয়োজন? ‘সাইয়িদুনা উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘সমস্ত কাজ নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। ব্যক্তি তাই পাবে, যা সে নিয়ত করবে। অতএব, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সন্তুষ্টির) জন্য হিজরত করেছে, তার হিজরত (বাস্তবিকই) আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য হয়েছে। আর যে ব্যক্তির হিজরতের (উদ্দেশ্য) ছিল, দুনিয়া উপার্জন বা কোনো নারীকে বিয়ে করা তার হিজরত সে উদ্দেশ্যেই গণ্য হবে।’ (সে আখিরাতে কোনো সাওয়াব পাবে না।) (সূরা মুমিনুন: ১১৫)

ইসলাম ও মাযহাব নিয়ে কিছু বিভ্রান্তি ও তা নিরসন

লা মাযহাবির পক্ষ থেকে আর একটা প্রশ্ন করা হয়, ইমামগণ সাধারণ মানুষ; তারা তো নবী না। আর সবাই একমত যে নবী ছাড়া প্রতিটি মানুষ যত বড়ই ইমাম হোক সবাই সঠিক করতে পারে আবার ভুল করতে পারে। তাই আমি এমন একজন মানুষকে কিভাবে মানবো যে সঠিক করতে পারে আবার ভুল করতে পারে। ইমামকে মানা ওয়াজিব করে দেওয়া মানে একটা ভুল কাজ

সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব কুরআন মাজীদ

যাবতীয় কল্যাণ, সর্বপ্রকার জ্ঞান-গরিমা, প্রজ্ঞা ও রহস্যের আধার হল আল কুরআন। একে অনুসরণ করেই দুনিয়া ও আখিরাতে পাওয়া যায় সুখের সন্ধান, মেলে সঠিক পথের দিশা। আল কুরআন মহান আল্লাহর বাণীর অপূর্ব সমাহার বিস্ময়কর এক গ্রন্থের নাম। আল কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ সংরক্ষিত এক সংবিধান। আল্লাহ তা‘আলা জিবরাঈল আলাইহিস সালামের মাধ্যমে সুদীর্ঘ ২৩ বছরে মানব জাতির হিদায়াত হিসেবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন তার নাম আল কুরআন। এই কুরআন যেমন সমগ্র মানব জাতির মানসিক সংশয়, সন্দেহ, অস্পষ্টতা, কুপ্রবৃত্তি, লোভ-লালসা নামক নানা রকম রোগ-ব্যাধি নিরাময়ের অব্যর্থ মহৌষধ ঠিক তেমনি দৈহিক রোগ-ব্যাধি, বেদনা, কষ্ট-ক্লেশ এবং জীবন চলার পথের সকল অন্ধকার বিদূরিত করার এক অনবদ্য নির্দেশিকা। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, ‘আমি কুরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের প্রতিষেধক এবং মুমিনদের জন্য রহমত।’ (বনী ইসরাঈল : ৮২) এই কুরআন হল, সত্য-মিথ্যা এবং বৈধ-অবৈধের সীমা-রেখা

মুসলিম উম্মাহর বিপর্যয়ের কারণ

বর্তমান মুসলিম উম্মাহর এরূপ পরিণতির সম্মূখীন হওয়ার মৌলিক পাঁচটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। (১) আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে আরোপিত বিধান পারস্পরিক ঐক্য সংহতির কথা ভুলে গিয়ে সতধা বিচ্ছিন্ন হওয়া। (২) আল্লাহ তা’আলার অলৌকিকত্বের উপর নির্ভরশীল হওয়া। (৩) নিজেদেরকে নিষ্ক্রয় রেখে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করার প্রবণতা। (৪) ইসলামি শিক্ষা না থাকা। (৫) জিহাদে অনিহা প্রদর্শন।