আল— হজ্ব : ৩০ থেকে ৩৯
আল কুরআন (আল— হজ্ব : ৩০ থেকে ৩৯) ৩০. এগুলো (হজ্বের বিধান)। এ ছাড়া যে, আল্লাহ এবং পবিত্র (স্থান ও অনুষ্ঠান) সমূহের প্রতি সম্মান দেখাবে, তার প্রভ...
বিস্তারিতনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন
সাঈদ ইবনু আবদুর রহমান মাখযূমী রা. আব্বাদ ইবনু তামীম তৎপিতৃব্য আবদুল্লাহ্ ইবনু যায়দ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয...
বিস্তারিতবাংলাদেশের ইতিহাসে আরেকটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলো
নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস এর নেতৃত্বে বাংলাদেশের ইতিহাসে আরেকটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলো। নিঃসন্দেহে এই সরকার একটি বিপ্লবোত্তর সরক...
বিস্তারিতবিপি
রাকিবুল ইসলাম
একুশে
ফেব্রুয়ারী বাঙালি জাতির চির প্রেরণার অবিস্মরণীয়
একটি দিন। এটি শুধু বাংলাদেশের নয়, এখন এটি সারা বিশ্বের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা
দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। জাতির জীবনে শোকাবহ, গৌরবোজ্জ্বল, অহংকারে মহিমান্বিত চিরভাস্বর
এই দিনটি। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারী ছিল ঔপনিবেশিক প্রভুত্ব ও শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে
বাঙালির প্রথম প্রতিরোধ এবং জাতীয় চেতনার প্রথম উন্মেষ। সেদিন মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা
রাখতে গিয়ে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল মো: রফিক, আ. জব্বার, আ. সালাম, আবুল বরকত
ও সফিউররা। পৃথিবীর ইতিহাসে মাতৃভাষার জন্য রাজপথে বুকের রক্ত ঢেলে দেয়ার প্রথম নজির
এটি। সেদিন তাদের রক্তের বিনিময়ে শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছিল দুঃখিনী বর্ণমালা ও মায়ের ভাষা।
আর এর মাধ্যমে বাঙালি জাতিসত্ত্ব বিকাশের যে সংগ্রামের সূচনা হয়েছিল তা মুক্তিযুদ্ধের
গৌরবময় পথ বেয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে।
একুশে
ফেব্রুয়ারী তাই বাঙালির কাছে চির-প্রেরণার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। একুশের প্রথম প্রহর
থেকেই জাতি কৃতজ্ঞ চিত্তে ভাষা শহীদদের স্মরণ করে। হৃদয়ের সবটুকু আবেগ ঢেলে দিয়ে সবার
কণ্ঠে বাজে একুশের অমর সঙ্গীত -‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী’ আমি কি ভুলিতে পারি। একুশে ফেব্রুয়ারী
ভাঙালি জাতি সত্ত্বার শেকড়ের অনুপ্রেরণার দিন। এই দিনটি ঐতিহ্যের পরিচয়কে দৃঢ় করেছে।
বাংলা ভাষার রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে সম্মানের আসন লাভ করেছে। এ ভাষার
কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অমর কাব্যগ্রন্থ ‘গীতাঞ্জলী’ রচনা করে বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান নোবেল পুরস্কারে
ভূষিত হয়েছেন ১৯১৩ সালে। এ ভাষার অসাধারণ প্রজ্ঞাবান মানুষ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলা ভাষায় বক্তৃতা দিয়ে বাংলাকে
নিয়ে গেছেন বিশ্ব পরিমন্ডলে।
১৯৯৯
সালে ইউনেস্কো কর্তৃক বাংলাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি এবং ২০১০ সালে
জাতিসঙ্গের সাধারণ পরিষদে ‘এখন’ থেকে প্রতিবছর একুশে
ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে পালিত হবে’ প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
আর এভাবেই বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া চলমান।
ভাষা
আন্দোলনের সূচনা হয় ১৯৪৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাশেমের প্রতিষ্ঠিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন তমদ্দুন মজলিশের হাত ধরে। ১৫ সেপ্টেম্বর তমদ্দুন
মজলিশ একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে যার শিরোনাম ছিল ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা বাংলা-না
উর্দু ?’ এই পুস্তিকার লেখক কাজী মোতাহার হোসেন,
আবুল মনসুর আহমেদ এবং অধ্যাপক আবুল কাশেম বাংলা ভাষাকে ভাব-বিনিময়, অফিস আদালতের ভাষা
হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার পক্ষে জোরালো দাবি তুলে
ধরেন।
১৯৪৮
সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী পাকিস্তান গণপরিষদে উর্দু
ও ইংরেজীকে সরকারি ভাষা হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। গণপরিষদে পূর্ব বাংলার প্রতিনিধি ধীরেন্দ্রনাথ
দত্ত পাকিন্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা হিসেবে উর্দু ও ইংরেজীর পাশাপাশি বাংলাকে
গণপরিষদের ভাষা হিসেবে গ্রহণ করার প্রস্তাব করেন। পাকিস্তান গণপরিষদে তার প্রস্তাব
অগ্রাহ্য হলে পূর্ব বাংলায় শুরু হয় প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ। এর পরম্পরায় ২৭ ফেব্রুয়ারী
এক সভায় গঠিত হয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ।
সভায় বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার দাবিতে ১১ মার্চ বৃহস্পতিবার
সারা দেশে হরতাল পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৪৮
থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত ১১ মার্চ তারিখটি রাষ্ট্রভাষা দিবসরূপে পালিত হয়।
২১
মার্চ ১৯৪৮ সালে রেসকোর্স ময়দানে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ এক নাগরিক সংবর্ধনায় ঘোষণা করেন
যে ‘উর্দুই হবে পাকিন্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’ সমাবেশস্থলে উপস্থিত ছাত্রনেতারা ও জনতা সঙ্গে
সঙ্গে প্রতিবাদ করে। ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে অনুষ্ঠিত সমাবর্তন অনুষ্ঠানে
মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ Students Role in nation building শিরোনামে একটি ভাষণ প্রদানকালে
ক্যাটাগেরিক্যালি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা
হিসেবে প্রতিষ্ঠার দাবিকে নাকচ করে দিয়ে বলেন, ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে একটি এবং সেটি উর্দু, একমাত্র উর্দুই পাকিস্তানের মুসলিম পরিচয় তুলে ধরে।’ জিন্নাহর এই বক্তব্য সমাবর্তনস্থলে তীব্র
প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং ছাত্ররা দাড়িয়ে ‘‘নো নো’’ বলে প্রতিবাদ করে। জিন্নাহর এই বাংলা বিরোধী
স্পষ্ট অবস্থানের ফলে পূর্বে পাকিস্তানের ভাষা আন্দোলন আরো বেশি গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে।
ভাষা আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়ের সূচনা হয় ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারী খাজা নাজিমুদ্দীনের
ভাষণের মাধ্যমে। এদিন পল্টন ময়দানের এক জনসভায় জিন্নাহর কথাই পুনরাবৃত্তি করে বলেন,
‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু’। নাজিমুদ্দীনের বক্তৃতার প্রতিবাদে সভা অনুষ্ঠিত
হয় এবং ৩০ জানুয়ারী ঢাকায় ছাত্ররা ধর্মঘট পালন করে। সেদিন ছাত্র-ছাত্রীরা আমতলায় সমবেত
হয়ে ৪ ফেব্রুয়ারী ধর্মঘট ও প্রতিবাদ সভা এবং ২১ ফেব্রুয়ারী দেশব্যাপী হরতাল পালনের
সিদ্ধান্ত নেয়। পরে তারা মিছিল নিয়ে বর্ধমান হাউসের দিকে অগ্রসর হয়।
পরদিন
৩১ জানুয়ারী ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বার লাইব্রেরি হলে অনুষ্ঠিত সভায় মাওলানা
ভাসানীর সভাপতিত্বে কাজী গোলাম মাহবুবকে আহ্বায়ক করে ৪০ সদস্যের ‘সর্বদলীয় কেন্দ্রীয়
রাষ্ট্রভাষা কর্মী পরিষদ গঠিত হয়’। এই পরিষদ তার সভায়
২১ ফেব্রুয়ারী হরতাল, সমাবেশ ও মিছিলের কর্মপরিকল্পনা
গ্রহণ করে। ২০ ফেব্রুয়ারী সরকার স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে ২১ ফেব্রুয়ারী থেকে ঢাকায়
এক মাসের জন্য সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা জারি করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
ছাত্ররা বিভিন্ন হলে সভা করে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেয়।
২১
ফেব্রুয়ারী পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী
সকাল ৯টা থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে
এসে জড়ো হয়। তারা ১৪৪ ধারা জারির বিপক্ষে স্লোগান
দিতে থাকে এবং পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদের সদস্যদের বাংলা ভাষা সম্পর্কে সাধারণ জনগণের মতামতকে
বিবেচনা করার আহ্বান জানাতে থাকে। বেলা ২টার দিকে আবদুল মতিন এবং গাজীউল হকসহ অন্যান্য
নেতারা দাবি আদায়ে অনড় থেকে।
ছোট
ছোট দলে মিছিল নিয়ে ‘রাষ্টভাষা বাংলা চাই’ স্লোগান দিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে এলে পুলিশ তাদের
ওপর লাঠিচার্জ করে। এমনকি ছাত্রীরাও এ আক্রমণ থেকে রেহাই পায়নি। ছাত্রছাত্রীরা পুলিশের
দিকে ইট-পাটকেল ছোঁড়া শুরু করলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে। বিক্ষুদ্ধ ছাত্রদের সামলাতে ব্যর্থ হয়ে গণপরিষদ
ভবনের দিকে অগ্রসরমাণ মিছিলের ওপর পুলিশ গুলি চালায়। গুলিতে আব্দুল জব্বার, রফিক উদ্দিন
আহমেদ, ও আবুল বরকত নিহত হয়। বহু আহতকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ছাত্র হত্যার সংবাদ
দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে জনগণ তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়ে।
উপায়ন্তর না দেখে ২২ ফেব্রুয়ারী নুরুল
আমিন সরকার তড়িঘড়ি করে আইন পরিষদে বাংলা ভাষাকে
পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব আনেন এবং প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে পাস হয়। ১৯৫৪ সালের ৭
মে যুক্তফ্রন্ট সরকারের উদ্যোগে পাকিস্তানের
সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকার করে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে। ১৬ ফেব্রুয়ারী
১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের গণপরিষদ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে তা সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত
করার জন্য প্রস্তাব উত্থাপন করার জন্য প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। ১৯৫৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারী
পাকিস্তান জাতীয় সংসদ বাংলা এবং উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি
দিয়ে সংবিধান পাস করে। ওই বছরের ৩ মার্চ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানকারী
পাকিস্তানের সংবিধান কার্যকর হয় এবং ১৯৪৭ সালে
তমদ্দুন মজলিশের মাধ্যমে মায়ের ভাষায় কথা বলার যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল তার সাফল্য অর্জিত
হয়।
২১
ফেব্রুয়ারী দিনটি উদযাপন করা শুরু হয় ১৯৫৩ সাল থেকে। এদিন প্রত্যুষে সর্বস্তরের মানুষ
খালি পায়ে প্রভাত-ফেরিতে অংশগ্রহণ করে এবং
শহীদ মিনারে গিয়ে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন ও পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে। সারা দিন মানুষ শোকের চিহ্নস্বরূপ কালো
ব্যাজ ধারণ করে। এছাড়া আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদির মাধ্যমে ভাষা আন্দোলনের
স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে। বাংলা
আজ শুধু বাংলাদেশের ভাষা নয়, এটি বিশ্বের কাছে এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস সৃষ্টিকারী পরিচিত
ভাষা। আর এই পরিচয় দেয়ার প্রথম অবদানটুকু হলো বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। ১৯১৩ সালে
তার অমর কাব্য গীতাঞ্জলি তাকে এনে দেয় ‘নোবেল পুরস্কার’ আর এর মাধ্যমে বিশ্ববাসী জানতে পারে বাংলা
ভাষার কথা, শুরু হয় বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর বাংলা
ভাষাকে সত্যিকার অর্থে বিশ্বায়নের পূর্ণরূপ
দেয়ার জন্য জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তার এই উদ্যোগের প্রথম বাস্তবায়ন হয় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে।
জাতিসংঘে কার্যক্রম পরিচালিত হয় পাঁচটি ভাষায়। সব দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী
তথা জাতিসংঙ্গের নিযুক্ত প্রতিনিধিরা উক্ত
পাঁচটি ভাষার যেকোনো একটি ভাষায় ভাষণ দেন। একমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪
সালের ২৩ মার্চ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে সদস্যরাষ্ট্র
হিসেবে বাংলায় ভাষণদান করার ফলে বিশ্ববাসী জানতে পারে বাংলা ভাষার মহত্ব।
১৯৯৯
সালের ১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে UNESCO কর্তৃক বাংলা ভাষাকে দেয়া স্বীকৃতি
বিশ্ব দরবারে এনে দিয়েছে এক বিশাল খ্যাতি। ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে বিশ্ব জুড়ে অমর একুশের উদযাপন
নিঃসন্দেহে এক বিশাল জাতীয় গৌরব ও সম্মানের। ২০০০ সাল থেকে UNESCO এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো
এ দিবসটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করে।
২০০১
সালের ১৫ মার্চ বিশ্বের সব মাতৃভাষার গবেষণা, উন্নয়ন ও সংরক্ষণে কাজ করার উদ্যোগে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের উপস্থিতিতে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আস্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন
করেন ঢাকার সেগুনবাগিচায়। বর্তমানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ভাষাসংক্রান্ত
গবেষণা, ভাষা সংরক্ষণ ও প্রশিক্ষণের পাশাপাশি এটি ভাষার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সেতুবন্ধন
হিসেবে কাজ করছে যা বাংলা ভাষাকে বিশ্বমর্যাদায় আসীন করতে ভূমিকা রাখছে। ২০১০ সালের ৩ নভেম্বর জাতিসংঘের ৬৫তম সাধারণ অধিবেশনে
৪র্থ কমিটিতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের প্রস্তাবটি উত্থাপন করে এবং
প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। ফলে এটি বাঙালি জাতি, বাংলা ভাষার প্রতি বিশ্ববাসীর
অকুণ্ঠ সমর্থন এবং সম্মান প্রদর্শনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে। বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে বাংলা ভাষা
ও সংস্কৃতি চর্চা বিশ্বজুড়ে বেড়ে চলেছে। মাতৃভাষার
সংখ্যা বিচারে বাংলা ভাষা পৃথিবীর একটি শক্তিশালী ভাষা। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বাংলা ভাষা ব্যবহারকারী দেশের
সংখ্যা মূলত একটি-বাংলাদেশ। সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। এর বাইরে
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা প্রদেশ, আসাম প্রদেশের বরাক উপত্যকার অন্যতম প্রশাসনিক
ভাষা বাংলা, ফলে ভারতের ক্ষেত্রে বাংলা একটি প্রাদেশিক ভাষা। ভারত উপমহাদেশের বাইরে
একমাত্র আফ্রিকার সিয়েরালিওনে বাংলা ভাষাকে সরকারি ভাষার মর্যাদা দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার সংসদ বাংলাকে
স্বীকৃতির বিল পাস করে। ফলে বাংলা ভাষা লাভ করে এক অনন্য মর্যাদা।
এই মুহুর্তে বহির্বিশ্বে ৩০টি দেশের ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু রয়েছে বাংলা বিভাগ, সেখানে প্রতি বছর হাজার হাজার অবাঙালি পড়ুয়া বাংলা ভাষা শিক্ষা ও গবেষণার কাজ করছে। এছাড়া চীনা ভাষায় রবীন্দ্র রচনাবলির ৩৩ খন্ডের অনুবাদ এবং লালনের গান ও দর্শন ইংরেজি ও জাপানি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। বাংলা ভাষা, সাহিত্য, ইতিহাস ও সংস্কৃতি নিয়ে বহির্বিশ্বে ভারত ও বাংলাদেশের পর বৃটেন ও আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি চর্চা হয়ে থাকে। এর বাইরে চীন, জাপান, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, জার্মানি, পোল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বাংলা ভাষার সংস্কৃতি চর্চা হচ্ছে। আমেরিকায় কমপক্ষে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় ও এশীয় গবেষণা কেন্দ্রে বাংলা ভাষার চর্চা হচ্ছে। এর মধ্যে নিউইর্য়ক, শিকাগো, ফ্লোরিডা, ক্যালিফোর্নিয়া, ভার্জিনিয়া উল্লেখযোগ্য। বিশ্বের ছয়টি দেশের রাষ্ট্রীয় বেতারে বাংলা ভাষার আলাদা চ্যানেল রয়েছে। আরও ১০টি দেশের রেডিওতে বাংলা ভাষার আলাদা অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হচ্ছে। বৃটেনে ছয়টি ও আমেরিকায় ১০টি বাংলাদেশি মালিকানাধীন ও বাংলা ভাষার টেলিভিশন চ্যানেল রয়েছে। বৃটেনে ১২টি বাংলা সাপ্তাহিক পত্রিকা বের হয়। ‘বেতার বাংলা’ নামে সেখানে একটি বাংলা রেডিও স্টেশন রয়েছে।
ইউরোপের
ইতালিতে বর্তমানে পাঁচটি বাংলা দৈনিক পত্রিকা
এবং রোম ও ভেনিস শহর থেকে তিনটি রেডিও স্টেশন পরিচালিত হচ্ছে। ইতালি থেকে ছয়টি অনলাইন
টেলিভিশন এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে শতাধিক ফেসবুক টেলিভিশন চালু রয়েছে। এছাড়া ডেনমার্ক সুইডেনসহ ইউরোপের আটটি দেশ এবং মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশ থেকে বাংলা ভাষায়
মূদ্রিত ও অনলাইন পত্রিকা প্রকাশিত হয়। একুশে ফেব্রুয়ারী উদযাপিত হয় সারা পৃথিবীতে
একুশে আমাদের মননের বাতিঘর হিসেবে। একুশ এখন সারা বিশ্বের ভাষা ও অধিকারজনিত সংগ্রাম
ও মর্যাদার প্রতীক। সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে
মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের অহংকার ‘শহীদ মিনার’। কিছু ঘটনা চেতনার আলো ছড়ায় সারা বিশ্বে।
সে চেতনার দৃপ্ত শপথ জুড়ে আছে আমাদের ভাইয়েরা, আমাদের ভাষা শহীদরা। সঙ্গে আছে সেই ঢাকা
মেডিকেল প্রাঙ্গণ, সেই রক্তের ইতিহাস। মাতৃভাষার সুরক্ষা, বিকাশ এবং অনুশীলন ছাড়া কোনো
জাতি অগ্রসর হতে পারে না, বাঙালি জাতি তো নয়ই। আর এভাবেই বাংলা ভাষা দিনে দিনে হয়ে
উঠছে বিশ্বায়নের অন্যতম মাধ্যম।
বাংলার ইতিহাসে বাঙালির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দু’টি গৌরবোজ্জ্বল ঘটনা হলো বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা এই দু’টি মহান আন্দোলনে বিজয়ী হয়েছি। এখন সেই মহান ফেব্রুয়ারী মাস। ১৯৫২-এর মহান ভাষা আন্দোলনে এ দেশের সর্বস্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে শরিক হয়েছিলেন।
একুশে ফেব্রুয়ারী বাঙালি জাতির চির প্রেরণার অবিস্মরণীয় একটি দিন। এটি শুধু বাংলাদেশের নয়, এখন এটি সারা বিশ্বের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। জাতির জীবনে শোকাবহ, গৌরবোজ্জ্বল, অহংকারে মহিমান্বিত চিরভাস্বর
কুরআনের বহু আয়াতে মহান আল্লাহ কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন মানুষের কথা উল্লেখ করে জানিয়েছেন, তাদের তিনি ভালোবাসেন। এ নিবন্ধে আল্লাহর প্রিয় সে সকল পুণ্......
কুরআনের বহু আয়াতে মহান আল্লাহ কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন মানুষের কথা উল্লেখ করে জানিয়েছেন, তাদের তিনি ভালোবাসেন। এ নিবন্ধে আল্লাহর প্রিয় সে সকল পুণ্......