আল— হজ্ব : ৩০ থেকে ৩৯
আল কুরআন (আল— হজ্ব : ৩০ থেকে ৩৯) ৩০. এগুলো (হজ্বের বিধান)। এ ছাড়া যে, আল্লাহ এবং পবিত্র (স্থান ও অনুষ্ঠান) সমূহের প্রতি সম্মান দেখাবে, তার প্রভ...
বিস্তারিতনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন
সাঈদ ইবনু আবদুর রহমান মাখযূমী রা. আব্বাদ ইবনু তামীম তৎপিতৃব্য আবদুল্লাহ্ ইবনু যায়দ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয...
বিস্তারিতবাংলাদেশের ইতিহাসে আরেকটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলো
নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস এর নেতৃত্বে বাংলাদেশের ইতিহাসে আরেকটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলো। নিঃসন্দেহে এই সরকার একটি বিপ্লবোত্তর সরক...
বিস্তারিতআলম
তালুকদার
মানুষ
চিন্তাশীল এক আশ্চর্য প্রাণী। সে শুধু চিন্তাই করে না, চিন্তার বাস্তবায়নও করে। প্রথমে
ভাষা, তার পর লেখা, ছাপানো বই, তার পর আবার বইমেলা! পাঠক-ক্রেতাকে আকৃষ্ট করার
নানান কায়দা-কানুন। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, এই বইমেলার ইতিহাস কমপক্ষে ৫০০ বছরের
পুরনো ইতিহাস। পৃথিবীতে প্রথম বইমেলার শুভ সূচনা হয় জার্মানিতে, যা ফ্রাঙ্কফুর্ট
বইমেলা নামে সুপরিচিত। মাত্র পাঁচ দিনের বইমেলা। প্রথম তিন দিন ব্যবসায়ীদের জন্য।
পরের দুই দিন সবার জন্য উন্মুক্ত। তো বাংলাদেশে এই ব্যতিক্রমধর্মী বইমেলা কীভাবে
শুরু হলো? তাও আবার পুরো এক মাস! পৃথিবীর অন্য দেশ চিন্তাই করতে পারে না! কে বা
কারা এই বইমেলার চিন্তক বা অগ্রনায়ক? ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, পাকিস্তান আমলে
জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক সরদার জয়েন উদ্দীন সাহেব বইমেলার অগ্রনায়ক। তিনি
যখন বাংলা একাডেমিতে চাকরি করতেন তখন একাডেমিতে প্রচুর বিদেশি বই আসত। এর মধ্যে
একটি বই ছিল ‘ওয়ান্ডারফুল ওয়ার্ল্ড বুকস’। এখানে ‘বুক ফেয়ার’ এই শব্দ দুটি তাকে
চমকিত করে। বুক ফেয়ার এই শব্দ দ্বারা তিনি অনুপ্রাণিত হয়ে তৎকালীন পাবলিক
লাইব্রেরিতে এখন যেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি সর্বপ্রথম ‘শিশু গ্রন্থমেলার’
যাত্রা শুরু করেন। এই ঘটনাটি তিনি ঘটান সেই ১৯৬৫ সালে! এতে তিনি সন্তুষ্ট হতে না
পেরে ১৯৭০ সালে বড় আকারে নারায়ণগঞ্জে বইমেলার আয়োজন করেন। এই আয়োজনে আলোচক ছিলেন
অধ্যাপক আবদুল হাই ও অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী এবং সরদার ফজলুল করিম। এই বইমেলায় তিনি
এক অবিশ্বাস্য মজার কা- করেছিলেন। মেলার ভেতরে একটি গরু বেঁধে রেখে তার গায়ে
লিখেছিলেন, ‘আমি বই পড়ি না!’ ১৯৭২ সালে বইমেলা হয়নি। তবে একাডেমির দেয়ালের বাইরে
মুক্তধারার চিত্তবাবু ও বর্ণমিছিলের তাজুল ইসলাম বই নিয়ে বসেছিলেন। ১৯৭৪ সালে
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন উদ্বোধন
করেছিলেন।
১৯৮৪
সাল। অমর একুশে গ্রন্থমেলার আনুষ্ঠানিক শুভযাত্রা। তখনকার মহাপরিচালক কবি মনজুরে
মওলা এই ঐতিহাসিক আয়োজনের রূপকার। তখনকার মেলা হতো মূল এলাকাকে ঘিরেই। সেই মেলা
ছিল ছোট মেলা। এখনকার মেলা বড় এলাকা জুড়ে। রাস্তা পার হয়ে ওপারে। দুই পারে অনেকের
যাওয়া হয় না। অনেকের সঙ্গে দেখাও হয় না। আগে দেখা না হওয়ার সুযোগ ছিল না। লাইন ধরে
যেতে হতো, লাইন ধরে বের হতে হতো। এখন বেশি খোলা-মেলা মেলা! আগে বন্ধের দিন শাহবাগ
থেকে লাইন দিতে হতো। আর ওইদিকে শিশু একাডেমি! অনেক জায়গা হওয়ার জন্য আর সেদিনের সে
চিত্র এই প্রজন্ম দেখতে পাবে না! বইমেলায় থাকবে প্রকাশক, পাঠক, ক্রেতা আর লেখক।
তার সঙ্গে মিডিয়ার লোকজন। আর কিছু দর্শক। অনেক নতুন লেখক ও নতুন প্রকাশক আছেন। আসল
কথা বই ক্রেতা। বার্নাডশ একবার তার প্রকাশককে একটি পত্র দিলেন। তাতে কোনো শব্দ
নেই। শুধু একটা? হোয়াট। প্রকাশকও কম নন। তিনি উত্তর দিলেন! ওয়ান্ডারফুল। পৃথিবীতে
নাকি এটাই সবচেয়ে ছোট চিঠি!
আমাদের
অবশ্য পাঠ্যবইয়ের লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী জানিয়েছেন, ‘তিনিই প্রডিউসর, তিনিই
কনজুমার! তার রম্য খুবই উচ্চমানের। একজন ধনী নারী অনেক টাকা নিয়ে নিউমার্কেটে গিয়ে
অনেক বাজার করেছেন। তার টাকা শেষ হয় না। দোকানদার বলল, ম্যাডাম একটা বই নিয়ে যান।
তিনি উত্তরে বললেন, ‘না বই না, বই তো বাসায় একটা আছে।’ অন্য এক ম্যাডামকে
বলেছিলেন, ‘একটা ভারী কিসিমের বই দেব? হ্যাঁ দিতে পারেন, সঙ্গে গাড়ি আছে অসুবিধা
হবে না।’ যাদের একটা বই হলে চলে, তারা তো বইমেলায় যাবে না। ভারী বই অনেকে কিনবে
না, কারণ সবার তো গাড়ি নেই! আজকাল ঘরে ঘরে লেখক। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব,
বান্ধবীরাও লেখক। অনেকে ভয়ে বইমেলায় যায় না। যদি অনুরোধে বই কিনতে হয়! বড় বড় লেখকও
নতুন লেখকদের সঙ্গে সময় দিতে চান না। কারণ অনেক লেখক সৌজন্য কপি দিতে চান। যদি
বিশটা বই পান তখন সে বই নিয়ে হাঁটবেন কেমনে? বড় লেখকরাও আজকাল চালাক হয়ে গেছেন!
সবাই নন। কেউ কেউ।
এবারের
বইমেলার পরিসর অনেক বড়। অনেক নতুন নতুন আইডিয়ার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। মুজিব
শতবর্ষের প্রথম বইমেলা। জাতির পিতাকে জানার অবাধ সুযোগ সংযোজন করা হয়েছে। বই
উন্মোচন কর্নার একাধিক করা হয়েছে। বেশ ফিটফাট চনমনে চনমনে ভাব। অনেক প্রকাশক
মহাব্যস্ত। অনেকের মুখ গোমরা! অনেক বিখ্যাত লেখকের হাত ব্যথা হয়ে যাচ্ছে। ফেসবুকে
প্রচার-প্রচারণা চলছে। নানান কা- ঘটে যাচ্ছে। কেউ জানতে পারছে, কেউ পারছে না।
বাঙালি
পাঠক যিনি সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘বই কেনা’ প্রবন্ধ পাঠ করেছেন তারা খুব সহজেই বই কেনা
এবং বই পড়ার বিষয়টা অনুধাবন করতে পারেন। তিনি লিখেছেন অনেকটা এভাবে, মাছিমারা সহজ
নয়, কারণ তাদের অনেকগুলো চোখ। যেদিক দিয়ে মারতে যাবেন সে দেখে ফেলে। আহা যদি মাছির
মতো অনেকগুলো চোখ থাকত তা হলে একসঙ্গে কত দুনিয়া দেখতে পেতাম। তা সম্ভব নয়। তবে
একজন বই পাঠক ইচ্ছা করলে অনেকগুলা চোখের মালিক হতে পারেন। যদি তিনি নিয়মিত বই
পড়েন। একটি বই একটি চোখ। যত বই তত চোখ! একজন মানুষের অনেকগুলো আশ্রয় দরকার। বই পাঠ
হলো অন্যতম শ্রেষ্ঠ আশ্রয়। আর এসব শ্রেষ্ঠ বই একজন পাঠক খুব সহজেই বইমেলা থেকে
সংগ্রহ করতে পারেন। বই যদি আশ্রয় হয়, তা হলে ডিজিটাল যুগে মোবাইল হলো সবচেয়ে আধুনিক
আশ্রয়। মানুষের অবসর এখন মোবাইলের দখলে! কিন্তু দুঃখের কথা হলো, সেখানেও পড়তে হয়!
পড়ার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু একটি বই যেমন যখন ইচ্ছা তখন পড়া যায়, চার্জ ছাড়াই
পড়া যায়, চোখের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি না করেই পড়া যায়, তা তো আর বিদ্যুৎচালিত
মোবাইলে সম্ভব নয়! শেষে একটা ফাও জোকস। ক্লাসিক বই কাহাকে বলে? যে বইটির সবাই প্রশংসা
করে কিন্তু কেউ কেনে না! লেখক শিশু
সাহিত্যিক, আমাদের সময়-এর সৌজন্যে)