অনুসরন করুন :

ব্লগের বিবরণ

Blog Photo
09 Mar 2023

অশ্লীলতা প্রতিরোধে ইসলামী রীতি-নীতি ও পর্দা


অশ্লীলতা প্রতিরোধে ইসলামী রীতি-নীতি পর্দা

 

ভূমিকা

 

অশ্লীলতা, অপকর্ম, ব্যভিচার এর প্রাথমিক অনৈতিক আচরণের ধ্বংসাত্মক প্রভাব শুধু ব্যক্তিদেরকেই ধ্বংস করেন বরং পরিবার, বংশ আবার কখনো সাম্রাজ্যকেও নিঃশেষ করে দেয়। বর্তমানে পৃথিবীতে যত হত্যা-লুট এর মত ঘটনা দেখা যায়, সঠিকভাবে খোঁজ নিলে দেখা যাবে যে, অধিকাংশ ঘটনার কারণ বা পটভমিকায় কোন না কোন নারী যৌন বিকৃতির ফাঁদ বা জাল রয়েছে। কারণেই পৃথিবীর সৃষ্টি লগ্ন থেকে পর্যন্ত সব জাতি, ধর্ম অঞ্চল বিষয়ে একমত যে, বিষয়টি খুবই ক্ষতিকর ধ্বংসাত্মক দোষ।  

পৃথিবীর শেষ লগ্নে এসেও ইউরোপিয়ান জাতিগুলো নিজেদের ধর্মীয় সীমারেখা এবং প্রাচীন শক্তিশালী ঐতিহ্য ভেঙ্গেচুরে ব্যভিচারকে কোন অপরাধই মনে করছে না। তারা সভ্যতা সমাজ জীবনকে এমনভাবে গড়ে নিয়েছে যাতে প্রতিটি পদক্ষেপে যৌন বিকৃতি অশ্লীলতার আবেদন ব্যাপকতা লাভ করেছে। কিন্তু এর কুফল অশুভ পরিণামকে তারাও অপরাধের তালিকা থেকে বাদ দিতে পারেনি। ফলে বেশ্যাবৃত্তি, ধর্ষণ জনসমক্ষে অশালীন কর্মকাÐকে Ðনীয় অপরাধ সাব্যস্ত করে রেখেছে। বিষয়টির উদাহরণ এভাবে উপস্থাপন করা যায় যে, কোন ব্যক্তিকে আগুন ধরাবার জন্য খড়ি সংগ্রহের সুযোগ দেয়া হলো, তাতে কেরোসিন ছিটিয়ে আগুন ধরানোরও সুযোগ দেয়া হলো, কিন্তু যখন আগুন ভয়াবহ লেলিহান শিখায় রূপান্তরিত হলো, তখন সবাই তা নিয়ন্ত্রণের জন্যে তৎপর হল। অর্থাৎ রান্না করার জন্যে হাড়ির নিচে আগুন জ্বালানোর সুযোগ দেয়া হবে তবে তা নিয়ন্ত্রিত ভাবে।  

অন্যদিকে ইসলাম যে বিষয়গুলোকে অপরাধমূলক মানবতার জন্যে ক্ষতিকর বলে গণ্য করে এবং সেগুলোকে শাস্তিযোগ্য অপরাধের মধ্যে গণ্য করে, সেগুলোকে ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে, এমনকি সেই অপরাধগুলোর প্রাথমিক আচরণগুলোর ওপরও বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে ব্যভিচার অপকর্ম থেকে রক্ষা করা, আর তা শুরু করা হয়েছে দৃষ্টি অবনত রাখার আইন দিয়ে। এজন্যই নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নারীদেরকে ঘরের ভিতরে থাকার উপদেশ দিয়েছে। বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হলে, বোরকা বা লম্বা চাদরে দেহ আবৃত করে রাস্তারপার্শ্ব দিয়ে চলার উপদেশ দিয়েছে। সুগন্ধী লাগিয়ে বা শব্দ হয় এমন অলংকার পড়ে বের হতে নিষেধ করেছে। এরপর যে কেউ এসব সীমানা ডিঙ্গিয়ে বাইরে বের হয়, তার জন্য এমন কঠিন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করেছে, যা একবার কোন অপরাধীর ওপর প্রয়োগ হলে, গোটা জনগোষ্ঠীর জন্য শিক্ষা হয়ে যায়।  

ইউরোপিয়ানরাও তাদের অন্ধ অনুসারীরা নিজস্ব অশ্লীলতাকে বৈধতার রূপ দেয়ার জন্যে নারীর পর্দাকে স্বাস্থ্যহানী অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হিসেবে অভিহিত করে থাকে। তারা পর্দাহীনতার উপকারিতা (?) নিয়ে কুটতর্কের অবতারণা করে থাকে। এই বিষয়গুলোর বিস্তারিত প্রতি উত্তর বর্তমান যুগের আলিম বিশেষজ্ঞরা পুস্তকাকারে উপস্থাপন  করেছেন। বিষয়ে এখানে এতটুকুই বলা যেতে পারে যে, যেকোন কাজেরই ভালোমন্দ দিক থাকে। তেমনি ভাবে অপরাধ পাপের কিছুটা বাহ্যিক বা সাময়িক উপকার থাকলেও তা সার্বজনীন কল্যাণকর নয়। যেমন চুরি, ডাকাতি প্রতারণা কখনো কারো জন্যে সাময়িক ভাবে লাভজনক হতে পারে কিন্তু কেউ এগুলোকে সার্বজনীন লাভজনক বলার ধৃষ্টতা দেখায় না। কারণ এগুলোর অকল্যাণ ধ্বংসাত্মক পরিণতি স্পষ্ট হয়ে যায়। তেমনি ভাবে পর্দাহীন থাকার ভিতর সাময়িকভাবে কিছু অর্থনৈতিক লাভ থাকলেও এর ফলে পুরো দেশ জাতি হাজারও বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। কাজেই পর্দাহীনতা উপকারী বা লাভজনক বলা জ্ঞানীজনের কাজ হতে পারে না।  

অপরাধ প্রতিরোধে ইসলামে পূর্ব সতর্কতামূলক মূল্যবান  নীতিমালা এবং এর ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা 

তাওহীদ, রিসালাত আখিরাত ইত্যাদি মৌলিক বিষয়ে বিশ্বাস যেমন সব নবী-রসূলের শরীয়তে অভিন্ন সর্ব সম্মত ছিল, তেমনিভাবে সাধারণ পাপাচার, অশ্লীলতাও গর্হিত এবং প্রতিটি শরীয়তে নিষিদ্ধ বা হারাম। তবে পূর্ববর্তী শরীয়তগুলোতে এই পাপাচারগুলোর পূর্ব সর্তকতামূলক প্রাথমিক আচরণগুলো নিষিদ্ধ ছিলনা। এবং এই পাপাচারগুলোর প্রাথমিক অবস্থা অপরাধ হিসেবে বাস্তবায়নরূপ লাভ না করা পর্যন্ত তা হারাম ছিলনা। কিন্তু শরীয়তে মুহাম্মদী হচ্ছে কিয়ামত পর্যন্ত কার্যকরী শরীয়ত। তাই আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এই শরীয়ত হিফাযতের জন্যে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এই অপরাধ পাপাচারতো হারাম করা হয়েছেই, সাথে সাথে এই পাপাচারের প্রাথমিক অবস্থা, পাপের কারণ এর উপায়-উপকরণ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য পূর্ব সতর্কতামূলক কিছু বিধান আরোপ করা হয়েছে। যাতে মানুষ স্বভাবসুলভ ভাবে প্রাথমিক অবস্থা পার করে মূল অপরাধে প্রবেশ করতে না পারে। যেমন, মদ পান করা একটি অপরাধ। তা হারাম করা হয়েছে। সাথে সাথে মদ তৈরী করা, ক্রয়-বিক্রয় করা কাউকে দেয়াও হারাম করা হয়েছে। কারণে ফিকহবিদগণ অনুমোদনহীন লেনদেন থেকে অর্জিত মুনাফা বা লাভকে সুদের মতো অবৈধ সম্পদ আখ্যা দিয়েছেন। আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে কুরআন কারীমে শিরক প্রতীমা পূজাকে মহা-অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য সাব্যস্ত করেছে। সাথে সাথে এই অন্যায়ের কারণ উপকরণসহ সংশ্লিষ্ট সবকিছুর ওপর কড়া বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। যেমন সূর্যের উদয়-অস্ত মধ্য গগনে থাকার সময় মুশরিকরা সূর্যের পূজা করতো। এই সময়গুলোতে সলাত আদায় করলে সূর্য পূজারীদের সাথে একধরনের সাদৃশ্য হয়, তাই এই সময়গুলোতে সলাত আদায় করা হারাম করা হয়েছে। কারণ কোন নামাযী ব্যক্তি হয়তো কখনো সূূর্য পূজায় নিয়োজিত হওয়ার ন্যুনতম সম্ভাবনাও থাকতে পারতো, তাই পূর্ব সতর্কতামূলক এগুলোকেও হারাম করা হয়েছে। তেমনিভাবে প্রতীমা, মূর্তি চিত্র এগুলো সবই মূর্তি পূজার উপকরণ, তাই মূর্তি নির্মাণ চিত্র তৈরী এবং এগুলোর ব্যবহারও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।  

তেমনিভাবে ইসলামী শরীয়ত ব্যভিচারকে হারাম করার সাথে এর প্রাথমিক আচরণসহ কাছাকাছি কারণ উপায়-উপকরণকে হারামের তালিকাভুক্ত করেছে। অর্থাৎ ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া হচ্ছে মূল অপরাধ, আর এই অপরাধের প্রাথমিক আচরণ, এর কারণ উপায়-উপকরণকেও অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। যেমন কোন পরনারীর প্রতি, অথবা কিশোর বালকের প্রতি কামনার দৃষ্টিতে তাকানোকে চোখের যিনা, তাদের কথা শোনাকে কানের, এদেরকে স্পর্শকরাকে হাতের এবং তাদের উদ্দেশ্যে পথ চলাকে পায়ের যিনা বা অপরাধ হিসেবে ইসলামী শরীয়ত সাব্যস্ত করেছে। সহীহ হাদীসে তা- বর্ণিত হয়েছে। কাজেই মূল অপরাধ তার প্রাথমিক আচরণ, এর কারণ উপায়-উপকরণ থেকে বেঁচে থাকার জন্য মহিলাদের পর্দার বিধান অবতীর্ণ হয়েছে।

 

0 | দেখেছেন : 501 |

ক্যাটাগরি

সাম্প্রতিক পোস্ট

আমাদের অনুসরণ করুন :